আমরা কতদিন পর ভুলে যাবো মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা
হৃদয় হোসাইন: উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বহু শিশু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি এখন সারাদেশে মূল আলোচনা সমালোচনার বিষয়। সবার মুখে মুখে এই ঘটনা কেন্দ্রিক আলোচনা। এত আলোচনা বিশ্লেষণের কতদিন পর আমরা ভুলে যাবো এই হতাহতের ঘটনা। আমার ভুলে যাবো ঠিক যেভাবে ভুলে গেছি সাভারের রানা প্লাজারের ঘটনা। শহরে নতুন কোনো বড় চাঞ্চল্যকর খবর তৈরি হওয়ার আগে পযন্ত আমরা মনে রাখবো এই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। ভবনের কয়েকটি তলা নিচে ডেবে যায়। সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী,পুলিশ,র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা,একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল,সকালে ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে। এ দূর্ঘটনায় ১১২৯ জন শ্রমিক নিহত এবং ২৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। নিখোঁজ রয়েছে ৯৯৬ জন। যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল ফাটল নিশ্চিত হওয়ার পর ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে সত্ত্বেও। সুপারভাইজার ভবনটিকে নিরাপদ ঘোষণা করে। পরের দিন অনেক গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বলা হয়। ধসে পড়ার সময় ভবনটিতে প্রায় ৩০০০ কর্মী ছিল। ঐ সময় ভবনে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল নারী। সাথে তাদের শিশু সন্তানও সেখানে নার্সারী সুবিধায় ছিল। এ ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেন। ঘটনার পরদিন একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন ও ঐ ভবনের গার্মেন্টস মালিকদেরকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ভবনের দুটি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সাভার পৌরসভার দুজন প্রকৌশলীকেও গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া হয়। এই ঘটনায় দায়ী ভবন মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব গ্রেপ্তার করে। প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল ধসে যাওয়া ভবনের সামনে এসে আহাজারি করেন নিহত ও নিখোঁজের স্বজনেরা। এসব ঘটনা আমরা খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভুলে গেছি। আমরা ভুলে গেছি,২০২৪ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানী ঢাকা শহরের বেইলি রোড এলাকার বহুতল ভবনে সংঘটিত হওয়া অগ্নিকাণ্ড। সে রাতের অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া আরও ৭৫ জন বিভিন্নভাবে আহত অবস্থায় উদ্ধার হন। এবং তাদের মধ্যে ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল এম এল সাবিত আল হাসান নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। লঞ্চটি শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছিলো ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল। লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ স্বজনদের কান্না এখনো থামেনি। ঘটনাটি স্বাভাবিক ভাবেই ভুলে গেছে দেশবাসী। এতগুলো মানুষের প্রাণহানীর পরও নদীতে এলোমেলো ভাবে চলাচল করা কার্গো বা অন্যান ছোট নৌ যানবাহনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি নৌ কতৃপক্ষ। ২০২০ সালে ১৯ ডিসেম্বর জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল রেল ক্রসিং-এ একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১২ জন নিহত ৮ জন আহত হন। ২০১১ সালের ১১ জুলাই,চট্টগ্রাম মীরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা শেষে একদল শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার সময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী পিকআপটি রাস্তার পাশের একটি ডোবায় উল্টে পড়ে যায়। ঘটনার পরপর ডোবার জল থেকে ৪২ জন শিক্ষার্থীসহ ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একটি প্রতিবেদনে বলা হয় ট্রাকচালক বেপরোয়াভাবে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এবং মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এমন আরও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে যা আমরা নিয়ম করেই ভুলে গেছি। কতৃপক্ষের তদন্ত কমিটি। রাজনৈতিক দলের পাল্টা-পাল্টি বিবৃতিতে নতুন নতুন আলোচনার সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা ভুলে যায় এই সকল মর্মান্তিক ঘটনা। সবাই ভুলে গেলেও ভূলে যায় না কেবল মা সন্তান হারানোর স্মৃতি, স্ত্রী স্বামী হারানোর স্মৃতি,সন্তান পিতা-মাতা হারানোর স্মৃতি। জীবনের কালো অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে প্রতিবছর এক আকাশ বেদনা সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসে এই ভয়াবহ দিনগুলো। কাটা যুক্ত স্মৃতিতে বছরের পর বছর কেটে যায় স্বজন হারানো পরিবার গুলোর। এত কিছুর মাঝে আজ বারবার মনে পড়ে যায়,হায়দার হোসেন-এর লেখা ও সুর করা "যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রনা" আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া" করিতে পারি চিৎকার"এই গানটি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন